বিশ্ব হিন্দু পরিষদ
আফগানিস্তানের মরুভূমিতে মহাভারতে বর্ণিত বিমানের সন্ধান মিলেছে। ৮ সদস্যের এক মার্কিন সেনা দল ৫০০০ বছরের পুরাতন বিমানটির সন্ধান পেয়েছে। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে একটি গুহার মধ্যে বিমানটির সন্ধান পান তারা। ধারণা করা হচ্ছে, হিন্দুশাস্ত্রের মহাভারত ও বেদে ‘ভিমানা’ নামে যে উড়ন্ত যানের কথা বলা হয়েছে, এটি সেগুলোর একটি। মহাভারতে বর্ণিত বিমানের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এটির বৈশিষ্ট্যও মিলে গেছে।
মার্কিন সৈন্যের একটি অনুসন্ধানী দল এক অভিযানে বিমানটি আবিষ্কার করেন। দলটিতে ৮ জন সদস্য ছিলেন। তারা বিমানটি সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে বিমানটি অদ্ভুত কোনো শক্তি দ্বারা সুরক্ষিত রয়েছে। সেজন্য তারা সরাতে পারেননি। উল্টো ওই ৮ সদস্য একেবারে নিঁখোজ হয়ে যান।
পরবর্তীতে উদ্ধারকারী দল তাদের কোনো হদিস পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটির অদ্ভুত সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণে তারা নিখোঁজ হয়েছে। সেখানে হয়তো কোনো ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ মাধ্যাকর্ষণ ফিল্ড আছে। এই সুরক্ষা ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘সময় কূপ’। তবে গুহাটিতে নিখোঁজদের ব্যবহৃত একটি ক্যামেরা পাওয়া গেছে। সেটি নিয়ে গবেষণা চলছে।
বিমানটি সম্পর্কে প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারত ও বেদে বর্ণনা দেওয়া
আছে। এটি ভীনগ্রহের কোনো প্রযুক্তি কিনা, তা নিয়েও গবেষণা চলছে। বিমান আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ওই গুহায় প্রাচীনকালের কিছু লেখারও সন্ধান মিলেছে। সেসব নিয়েও গবেষণা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, অবশেষে প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য ‘মহাভারত’ এর হিসাবটা মিলল এবার। বিমান সম্পর্কে বেদের দুটি পঙতি ৪৭. kṛṣṇ áṃ niyânaṃ hárayaḥ suparṇâ / apó vásānā dívam út patanti tá âvavṛtran sádanād ṛtásyâd / íd ghṛténa pṛthivî vy ùdyate অর্থ : “সোনালি রংয়ের পাখিগুলো অন্ধকারে অবতরণ করে, আকাশ পাতাল ফাঁড়িয়া স্বর্গ দিয়ে চলে। / আবার সময় মত সে মর্তে নেমে এসে, সম্মোহনী শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সিক্ত করে।।” ৪৮. dvâdaśa pradháyaś cakrám ékaṃ / trîṇi nábhyāni ká u tác ciketa tásmin sākáṃ triśatâ ná śaṅkávo / `rpitâḥ ṣaṣṭír ná calācalâsaḥ অর্থ : “বারটি তার পাখা, একটি তার পা, তিনটি জাহাজ, কোন মানব ইহাকে বুঝতে পারে। / তিনশো ষাটটি পাখি একসাথে উড়ে, কার সাহস আছে তাকে নিচে নামাতে পারে।।” বিমান সম্পর্কে রামায়নের পঙতি “এই পুস্পক বিমানটি রবীর মত, রাবণের কাছ থেকে যেটা ছিনিয়ে আনা হয়েছে এবং আমার ভাইয়ের (রাম) কাছে থাকে। আকাশচারী যানটি আকাশ-পাতাল সব জায়গায় যেতে পারে, আকাশে চলার সময় সোনালী মেঘের মত দেখায়, যেটাতে প্রভু রাম আরহণ করেন।।” সময় কূপ কি? : মহাভারতে বলা আছে, বিমানটি একটি সময় কূপ দ্বারা আচ্ছাদিত। এর চারপাশে হয়তো এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ মাধ্যাকর্ষণ ফিল্ড আছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এটিকে ইউনিফিল্ড ফিল্ড থিউরি বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই থিউরিকে ১৯৪৩ সালে ফিলাডেলফিয়া থিউরি হিসেবে পরীক্ষা করা হয়। সম্প্রতি সেই গুহায় মার্কিন সেনাদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা থিওরিটিকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। এছাড়াও মহাভারত ও বেদে ভিমানিকা শাস্ত্রের কথা বলা হয়েছে। সেখানে সেই বিমানের যেমন বৈশিষ্ট্য বর্ণনা দেওয়া আছে, ঠিক সেই ধরনের বৈশিষ্ট্য আফগানিস্থানের গুহায় পাওয়া বিমানেও পাওয়া গেছে। বেদে বলা আছে, এই যানটি এক ধরনের অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে চলাচল করে। এটি পানিতে, বাতাসে আবার স্থলভাগ দিয়েও চলতে পারে। এই যানটির কাছে যদি কেউ যায়, তাহলে সে আর ফিরে আসতে পারে না। যানটির বিশেষ এক শক্তি আছে, যা অন্যান্য জীবকে খেয়ে ফেলে। অর্থাৎ কোনো ধরণের বিকিরণের কারণে জীবটি অদৃশ্য হয়ে যায়। সেটি উচ্চমানের লেজারও রশ্মিও হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন সেনারাও যানটির কোনো বিকিরণের শিকার হয়েছে। স্যার ডেসমন্ড লেসলি বলেন, ‘মহাভারত ও বেদে যে প্রাচীন যানটির কথা বলা আছে, সেটি আসলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বিরোধী বাহন। বেদে বাহনটির যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা আছে, তার সঙ্গে হিরোশিমায় ফেলা পারমানবিক বোমার মিল আছে। বেদে বলা আছে, যানটি ভগবান ব্রহ্মা পরিচালনা করতেন। তবে অনেক জায়গায় বলা আছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভগবান এটিকে পরিচালনা করেছেন। যেমন ভগবান কুবেরও এটিকে পরিচালনা করেছেন। এই তথ্য-প্রমাণগুলো আমরা হিন্দু ধর্মের প্রাচীন গ্রন্থগুলো থেকে সংগ্রহ করেছি। তবে সেখানে কিছু ভুলও থাকতে পারে। কারণ, গ্রন্থগুলো সেই আমলের সংস্কৃত ভাষায় লেখা। যার অনেক শব্দের অর্থ আমরা উদ্ধার করতে পারিনি।’ মহাভারতে বিমানটির জ্বলন্ত মিসাইল ব্যবহারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে মারণাস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা এরকম- অস্ত্রটি পরিচালিত হতো একটি বৃত্তাকার প্রতিফলকের মাধ্যমে। যখন সুইস অন করা হয়, তখন একটি ‘আলোর বাণ’ উৎপাদিত হয়। যখন এটিকে কোনো টার্গেটের উপর ফোকাস করা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে এটি তার ক্ষমতা দিয়ে লক্ষ্য বস্তুকে ধ্বংস করে দেয়। কয়েক বছর আগে তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে কিছু সংস্কৃত ভাষার দলিল উদ্ধার হয়েছে। পরে সেগুলোকে অনুবাদ করার জন্য চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রুথ রাইনা বলেন, ‘আমরা এই লেখাগুলোতে নক্ষত্র মণ্ডলে চলতে সক্ষম এই রকম মহাকাশযান নির্মাণের নির্দেশনা দেখতে পেয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই যানটির আসল রহস্য হলো এর মহাকর্ষ বিরোধী শক্তি। অর্থ্যাৎ মহাকর্ষের যে আনবিক শক্তি আছে, সেই শক্তিকে তোয়াক্কা না করেই যানটি চলতে পারে। তা সে জলই হোক, বা স্থলই হোক। আবার এটিতে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে যে আধ্যাত্মিক শক্তির কথা বলা আছে, ঠিক সে রকম শক্তিও আছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কেউ যদি আধ্যাত্মিক শক্তিকে আয়ত্ত করতে পারে, তাহলে সে শূন্যে ভাসতে পারবে, আকাশে উড়তে পারবে ইত্যাদি।’ ড. রুথ রাইনা বলেন, “এই শক্তিটিকে হিন্দু শাস্ত্রে লেঘিমা (সিদ্ধি) বলা হয়। শক্তিটি মানুষের শারীরবৃত্তীয়ভাবেই থাকে। কেউ কেউ সাধনার মাধ্যমে তার ফলটি ভোগ করতে পারে। আবার কেউ ভোগ করতে পারে না। এটিকে আবার ‘অপকেন্দ্র বল’ও বলা হয়। এই অপকেন্দ্র বলটি মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে পরাজিত করতে পারে। অর্থ্যাৎ সেখানে আর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করে না। যানটির ভিতরে এক ধরনের অলৌকিক শক্তি আছে, সেটির আরেকটা নাম হলো এ্যাসট্রাস “Astras”(বেদ অনুসারে)। আবার বেদের আরেক জায়গায় এটার নাম দেওয়া আছে এ্যান্টিমা “Antima”। আর এ্যান্টিমা শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় “যার অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা আছে।” আররো বলা আছে গারিমা “garima” অর্থ্যাৎ সেটি পাহাড়ের সমান ভারি হতে পারে। ‘সংস্কৃত ভাষায় এই যানটির নাম দেওয়া হয়েছে ভিমানা (Vimāna) । আর এই ভিমানা শব্দটি দিয়ে বোঝায় একটি বিশাল প্রাসাদ যা আধ্যাত্মিক শক্তির বলে চলতে পারে। প্রাচীন মহাভারত থেকে জানা যায়, এই যানটির চারটি পা বা চাকা ও বারটি হাত আছে। আর এর একটি অংশে মারাত্মক অস্ত্র রাখা আছে, যেগুলো লেজার অস্ত্রের মত। এখনও লেজার অস্ত্র পৃথিবীতে সমৃদ্ধ নয়, তাই আফগানিস্থানের এই ঘটনা গবেষকদের অবাক করে দিয়েছে।” এই প্রযুক্তিটি যদুর্বেদে (বেদের একটি প্রকার) যেভাবে বর্ননা করা আছে, ঠিক সেভাবেই তৈরি করা। সেখানে পরিস্কারভাবে বলা আছে যে, এই যানটির চালক হলো অশ্বিন। এছাড়াও মহাভারত, ভগবত পুরাণ, গীতা, রামায়নসহ হিন্দু ধর্মের অনেক গ্রন্থে এর সম্পর্কে বলা আছে। ঋগবেদের ১০২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে এই যানটি নিয়ে অনেক স্তব লেখা আছে। কিন্তু এখানে একটু বিরোধ আছে। যেমন ড. রুথ রাইনা তিব্বতে পাওয়া পান্ডুলিপির লেখা পড়ে বলেন, যানটির চারটি পা। কিন্তু ঋগবেদে বলা আছে এটির তিনটি পা ও তিনতলা বিশিষ্ট। সর্বোচ্চ তিন জন যাত্রী বহন করতে পারে। সোনা, রূপা ও লোহা দিয়ে এটি তৈরি। ওড়ার জন্য দুই দিকে দুটি পাখা আছে। রাজা ভুজুকে যখন সাগরে নিক্ষেপ করা হয় তখন অশ্বিন এই বাহনটিতে চড়ে তাকে রক্ষা করেছিলেন। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে প্রভু ভরত রাজের সময়ের ঘটনা এটি। ভিমানিকা শাস্ত্র নামের একটি অনুচ্ছেদে আরো বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে। কিন্তু সেগুলো এতদিন সবার অজানা ছিল। ১৮৭৫ সালে সেটি অবিষ্কার করা হয়। এই শাস্ত্র বাহনটির বিভিন্ন অংশ ও তার কাজ নিয়ে আলোচনা করেছে। যেমন কীভাবে বাহনটি আকাশ থেকে তার সোলার শক্তি সঞ্চয় করে, ঝড় বৃষ্টিকে কীভাবে প্রতিরোধ করে, কীভাবে মাটিতে নামে আবার কীভাবে আকাশে ওড়ে, একবার চার্জ নিয়ে কত দূরে যেতে পারে ইত্যাদি। এই পান্ডুলিপি থেকে পাওয়া তথ্যগুলো খুবই মজার ও অলৌকিক। কিন্তু সমস্যা হলো, লেখাগুলো সুপ্রাচীন সংস্কৃত ভাষায়। সে কারণে সবগুলো লেখার অর্থ উদ্ধার করা যাচ্ছে না। সে কারণে সেখানে কি বোঝানো হয়ে তা তা জানা যাচ্ছে না। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র গবেষক সমরঙ্গল সূত্রধরের গবেষণা অনুযায়ি, পাঁচটি অলৌকিক বিমান তৈরি করা হয়েছিল, পাঁচ দেবতার জন্য। তারা হলেন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, কুবের, ইন্দ্র ও ইয়ামা। তারপর আরো কিছু বিমান তৈরি করা হয় অন্যান্য দেবতাদের জন্য। বিমানগুলোর মধ্যে আবার চারটি প্রধান ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- রুকমা, সুন্দরা, ত্রিপুরা ও সাকুনা। রুকমার গঠন ছিল কলার মোচার মত। এর গায়ের রং উজ্জ্বল সোনালি। সুন্দরার গঠন হলো, আধুনিক রকটের মত। এটির রং ছিল উজ্জ্বল রূপার মত। ত্রিপুরার গঠন ছিল তিন কোনা বিশিষ্ট প্রসাদের মত এবং তিন তলা বিশিষ্ট। সর্বশেষ সাকুনার গঠন ছিল একটি পাখির মত। দুই দিকে দুটি পাখা ছিল তার। এই প্রধান চার ভাগ থেকে আবার ১১৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবে মৌলিক বৈশিষ্টগুলোর তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভিমানিকা শাস্ত্রে সেগুলোর সোলার শক্তি সঞ্চয় করা ও ব্যবহার করার সমস্ত কিছু বর্ণনা করা আছে। সেখানে বলা আছে, বাহনগুলোর আটটি টিউব বা গোলাকার নল আছে, যেগুলো দিয়ে সূর্যের আলো সংগ্রহ করে। এভাবে বাহনটির সমস্ত কিছু সিরিয়ালে বর্ণনা করা আছে। তবে অনেক লেখারই অর্থ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সমরঙ্গণ সূত্রধরের গবেষণা থেকে আরো জানা যায়, এটি কীভাবে পরিচালনা করা হয়। আর কীভাবে এটি তার শক্তি সঞ্চয় করে ইত্যাদি ইত্যাদি। সংস্কৃত এসব পান্ডুলিপিতে সেই সময়ের অসংখ্য রূপক শব্দ ও কাব্যরস ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা আজও জানিনা আসলে এই কাব্যরস গুলো দিয়ে তারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। যেমন এই বাহনগুলোর পাইলটকে কেমন দক্ষ হতে হবে, তাদের খাবার কী হবে, তাদের পোশাক কী রকম হবে, একবার খাবার নিয়ে তারা কতদিন চলতে পারবে ইত্যাদি। সমরঙ্গণ সূত্রধর তার গবেষণায় লিখেছেন, ‘শাস্ত্রে বাহনটি তৈরি করতে যে ডিজাইনের কথা বলা হয়েছে, সেখানে তিনটি পদার্থের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- সামালা, সাউন্ডালিকা ও মোউর্থিকা। যদি এই তিনটি পদার্থ একসঙ্গে ভালভাবে মেশানো হয়, তাহলে ১৬ প্রকার পদার্থ তৈরি হবে। যেগুলোর নাম ঠিক এই রকম- উসনামভারা, উসনাপা, লাজামরাতিক ইত্যাদি। কিন্তু সেগুলোর অর্থ আমাদের কাছে অজানা। এ ছাড়া বাহনটি তৈরি করতে কীভাবে ধাতুগুলো পরিস্কার করা হবে, কীভাবে বিভিন্ন এসিডিক পদার্থকে রিফাইন করবে, কীভাবে তাপমাত্রা থেকে তার তৈল সংগ্রহ করবে ইত্যাদিও বর্ণনা করা আছে।’ বাহনগুলোতে সাত ধরনের ইঞ্জিনের কথা বলা হয়েছে। যেগুলোর একটা আরেকটা থেকে আলাদা এবং তাদের কাজও আলাদা। একটিকে এক রকম কাজ করতে দেওয়া হয়, আরেকটিকে আরেক রকম কাজে লাগানো হয়। কারণ বিভিন্ন রকম ইঞ্জিন বিভিন্ন রকম কাজে পারদর্শী। তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ভাস্কর
আছে। এটি ভীনগ্রহের কোনো প্রযুক্তি কিনা, তা নিয়েও গবেষণা চলছে। বিমান আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ওই গুহায় প্রাচীনকালের কিছু লেখারও সন্ধান মিলেছে। সেসব নিয়েও গবেষণা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, অবশেষে প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য ‘মহাভারত’ এর হিসাবটা মিলল এবার। বিমান সম্পর্কে বেদের দুটি পঙতি ৪৭. kṛṣṇ áṃ niyânaṃ hárayaḥ suparṇâ / apó vásānā dívam út patanti tá âvavṛtran sádanād ṛtásyâd / íd ghṛténa pṛthivî vy ùdyate অর্থ : “সোনালি রংয়ের পাখিগুলো অন্ধকারে অবতরণ করে, আকাশ পাতাল ফাঁড়িয়া স্বর্গ দিয়ে চলে। / আবার সময় মত সে মর্তে নেমে এসে, সম্মোহনী শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সিক্ত করে।।” ৪৮. dvâdaśa pradháyaś cakrám ékaṃ / trîṇi nábhyāni ká u tác ciketa tásmin sākáṃ triśatâ ná śaṅkávo / `rpitâḥ ṣaṣṭír ná calācalâsaḥ অর্থ : “বারটি তার পাখা, একটি তার পা, তিনটি জাহাজ, কোন মানব ইহাকে বুঝতে পারে। / তিনশো ষাটটি পাখি একসাথে উড়ে, কার সাহস আছে তাকে নিচে নামাতে পারে।।” বিমান সম্পর্কে রামায়নের পঙতি “এই পুস্পক বিমানটি রবীর মত, রাবণের কাছ থেকে যেটা ছিনিয়ে আনা হয়েছে এবং আমার ভাইয়ের (রাম) কাছে থাকে। আকাশচারী যানটি আকাশ-পাতাল সব জায়গায় যেতে পারে, আকাশে চলার সময় সোনালী মেঘের মত দেখায়, যেটাতে প্রভু রাম আরহণ করেন।।” সময় কূপ কি? : মহাভারতে বলা আছে, বিমানটি একটি সময় কূপ দ্বারা আচ্ছাদিত। এর চারপাশে হয়তো এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ মাধ্যাকর্ষণ ফিল্ড আছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এটিকে ইউনিফিল্ড ফিল্ড থিউরি বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই থিউরিকে ১৯৪৩ সালে ফিলাডেলফিয়া থিউরি হিসেবে পরীক্ষা করা হয়। সম্প্রতি সেই গুহায় মার্কিন সেনাদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা থিওরিটিকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। এছাড়াও মহাভারত ও বেদে ভিমানিকা শাস্ত্রের কথা বলা হয়েছে। সেখানে সেই বিমানের যেমন বৈশিষ্ট্য বর্ণনা দেওয়া আছে, ঠিক সেই ধরনের বৈশিষ্ট্য আফগানিস্থানের গুহায় পাওয়া বিমানেও পাওয়া গেছে। বেদে বলা আছে, এই যানটি এক ধরনের অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে চলাচল করে। এটি পানিতে, বাতাসে আবার স্থলভাগ দিয়েও চলতে পারে। এই যানটির কাছে যদি কেউ যায়, তাহলে সে আর ফিরে আসতে পারে না। যানটির বিশেষ এক শক্তি আছে, যা অন্যান্য জীবকে খেয়ে ফেলে। অর্থাৎ কোনো ধরণের বিকিরণের কারণে জীবটি অদৃশ্য হয়ে যায়। সেটি উচ্চমানের লেজারও রশ্মিও হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন সেনারাও যানটির কোনো বিকিরণের শিকার হয়েছে। স্যার ডেসমন্ড লেসলি বলেন, ‘মহাভারত ও বেদে যে প্রাচীন যানটির কথা বলা আছে, সেটি আসলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বিরোধী বাহন। বেদে বাহনটির যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা আছে, তার সঙ্গে হিরোশিমায় ফেলা পারমানবিক বোমার মিল আছে। বেদে বলা আছে, যানটি ভগবান ব্রহ্মা পরিচালনা করতেন। তবে অনেক জায়গায় বলা আছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভগবান এটিকে পরিচালনা করেছেন। যেমন ভগবান কুবেরও এটিকে পরিচালনা করেছেন। এই তথ্য-প্রমাণগুলো আমরা হিন্দু ধর্মের প্রাচীন গ্রন্থগুলো থেকে সংগ্রহ করেছি। তবে সেখানে কিছু ভুলও থাকতে পারে। কারণ, গ্রন্থগুলো সেই আমলের সংস্কৃত ভাষায় লেখা। যার অনেক শব্দের অর্থ আমরা উদ্ধার করতে পারিনি।’ মহাভারতে বিমানটির জ্বলন্ত মিসাইল ব্যবহারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে মারণাস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা এরকম- অস্ত্রটি পরিচালিত হতো একটি বৃত্তাকার প্রতিফলকের মাধ্যমে। যখন সুইস অন করা হয়, তখন একটি ‘আলোর বাণ’ উৎপাদিত হয়। যখন এটিকে কোনো টার্গেটের উপর ফোকাস করা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে এটি তার ক্ষমতা দিয়ে লক্ষ্য বস্তুকে ধ্বংস করে দেয়। কয়েক বছর আগে তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে কিছু সংস্কৃত ভাষার দলিল উদ্ধার হয়েছে। পরে সেগুলোকে অনুবাদ করার জন্য চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রুথ রাইনা বলেন, ‘আমরা এই লেখাগুলোতে নক্ষত্র মণ্ডলে চলতে সক্ষম এই রকম মহাকাশযান নির্মাণের নির্দেশনা দেখতে পেয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই যানটির আসল রহস্য হলো এর মহাকর্ষ বিরোধী শক্তি। অর্থ্যাৎ মহাকর্ষের যে আনবিক শক্তি আছে, সেই শক্তিকে তোয়াক্কা না করেই যানটি চলতে পারে। তা সে জলই হোক, বা স্থলই হোক। আবার এটিতে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে যে আধ্যাত্মিক শক্তির কথা বলা আছে, ঠিক সে রকম শক্তিও আছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কেউ যদি আধ্যাত্মিক শক্তিকে আয়ত্ত করতে পারে, তাহলে সে শূন্যে ভাসতে পারবে, আকাশে উড়তে পারবে ইত্যাদি।’ ড. রুথ রাইনা বলেন, “এই শক্তিটিকে হিন্দু শাস্ত্রে লেঘিমা (সিদ্ধি) বলা হয়। শক্তিটি মানুষের শারীরবৃত্তীয়ভাবেই থাকে। কেউ কেউ সাধনার মাধ্যমে তার ফলটি ভোগ করতে পারে। আবার কেউ ভোগ করতে পারে না। এটিকে আবার ‘অপকেন্দ্র বল’ও বলা হয়। এই অপকেন্দ্র বলটি মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে পরাজিত করতে পারে। অর্থ্যাৎ সেখানে আর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করে না। যানটির ভিতরে এক ধরনের অলৌকিক শক্তি আছে, সেটির আরেকটা নাম হলো এ্যাসট্রাস “Astras”(বেদ অনুসারে)। আবার বেদের আরেক জায়গায় এটার নাম দেওয়া আছে এ্যান্টিমা “Antima”। আর এ্যান্টিমা শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় “যার অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা আছে।” আররো বলা আছে গারিমা “garima” অর্থ্যাৎ সেটি পাহাড়ের সমান ভারি হতে পারে। ‘সংস্কৃত ভাষায় এই যানটির নাম দেওয়া হয়েছে ভিমানা (Vimāna) । আর এই ভিমানা শব্দটি দিয়ে বোঝায় একটি বিশাল প্রাসাদ যা আধ্যাত্মিক শক্তির বলে চলতে পারে। প্রাচীন মহাভারত থেকে জানা যায়, এই যানটির চারটি পা বা চাকা ও বারটি হাত আছে। আর এর একটি অংশে মারাত্মক অস্ত্র রাখা আছে, যেগুলো লেজার অস্ত্রের মত। এখনও লেজার অস্ত্র পৃথিবীতে সমৃদ্ধ নয়, তাই আফগানিস্থানের এই ঘটনা গবেষকদের অবাক করে দিয়েছে।” এই প্রযুক্তিটি যদুর্বেদে (বেদের একটি প্রকার) যেভাবে বর্ননা করা আছে, ঠিক সেভাবেই তৈরি করা। সেখানে পরিস্কারভাবে বলা আছে যে, এই যানটির চালক হলো অশ্বিন। এছাড়াও মহাভারত, ভগবত পুরাণ, গীতা, রামায়নসহ হিন্দু ধর্মের অনেক গ্রন্থে এর সম্পর্কে বলা আছে। ঋগবেদের ১০২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে এই যানটি নিয়ে অনেক স্তব লেখা আছে। কিন্তু এখানে একটু বিরোধ আছে। যেমন ড. রুথ রাইনা তিব্বতে পাওয়া পান্ডুলিপির লেখা পড়ে বলেন, যানটির চারটি পা। কিন্তু ঋগবেদে বলা আছে এটির তিনটি পা ও তিনতলা বিশিষ্ট। সর্বোচ্চ তিন জন যাত্রী বহন করতে পারে। সোনা, রূপা ও লোহা দিয়ে এটি তৈরি। ওড়ার জন্য দুই দিকে দুটি পাখা আছে। রাজা ভুজুকে যখন সাগরে নিক্ষেপ করা হয় তখন অশ্বিন এই বাহনটিতে চড়ে তাকে রক্ষা করেছিলেন। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে প্রভু ভরত রাজের সময়ের ঘটনা এটি। ভিমানিকা শাস্ত্র নামের একটি অনুচ্ছেদে আরো বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে। কিন্তু সেগুলো এতদিন সবার অজানা ছিল। ১৮৭৫ সালে সেটি অবিষ্কার করা হয়। এই শাস্ত্র বাহনটির বিভিন্ন অংশ ও তার কাজ নিয়ে আলোচনা করেছে। যেমন কীভাবে বাহনটি আকাশ থেকে তার সোলার শক্তি সঞ্চয় করে, ঝড় বৃষ্টিকে কীভাবে প্রতিরোধ করে, কীভাবে মাটিতে নামে আবার কীভাবে আকাশে ওড়ে, একবার চার্জ নিয়ে কত দূরে যেতে পারে ইত্যাদি। এই পান্ডুলিপি থেকে পাওয়া তথ্যগুলো খুবই মজার ও অলৌকিক। কিন্তু সমস্যা হলো, লেখাগুলো সুপ্রাচীন সংস্কৃত ভাষায়। সে কারণে সবগুলো লেখার অর্থ উদ্ধার করা যাচ্ছে না। সে কারণে সেখানে কি বোঝানো হয়ে তা তা জানা যাচ্ছে না। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র গবেষক সমরঙ্গল সূত্রধরের গবেষণা অনুযায়ি, পাঁচটি অলৌকিক বিমান তৈরি করা হয়েছিল, পাঁচ দেবতার জন্য। তারা হলেন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, কুবের, ইন্দ্র ও ইয়ামা। তারপর আরো কিছু বিমান তৈরি করা হয় অন্যান্য দেবতাদের জন্য। বিমানগুলোর মধ্যে আবার চারটি প্রধান ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- রুকমা, সুন্দরা, ত্রিপুরা ও সাকুনা। রুকমার গঠন ছিল কলার মোচার মত। এর গায়ের রং উজ্জ্বল সোনালি। সুন্দরার গঠন হলো, আধুনিক রকটের মত। এটির রং ছিল উজ্জ্বল রূপার মত। ত্রিপুরার গঠন ছিল তিন কোনা বিশিষ্ট প্রসাদের মত এবং তিন তলা বিশিষ্ট। সর্বশেষ সাকুনার গঠন ছিল একটি পাখির মত। দুই দিকে দুটি পাখা ছিল তার। এই প্রধান চার ভাগ থেকে আবার ১১৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবে মৌলিক বৈশিষ্টগুলোর তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভিমানিকা শাস্ত্রে সেগুলোর সোলার শক্তি সঞ্চয় করা ও ব্যবহার করার সমস্ত কিছু বর্ণনা করা আছে। সেখানে বলা আছে, বাহনগুলোর আটটি টিউব বা গোলাকার নল আছে, যেগুলো দিয়ে সূর্যের আলো সংগ্রহ করে। এভাবে বাহনটির সমস্ত কিছু সিরিয়ালে বর্ণনা করা আছে। তবে অনেক লেখারই অর্থ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সমরঙ্গণ সূত্রধরের গবেষণা থেকে আরো জানা যায়, এটি কীভাবে পরিচালনা করা হয়। আর কীভাবে এটি তার শক্তি সঞ্চয় করে ইত্যাদি ইত্যাদি। সংস্কৃত এসব পান্ডুলিপিতে সেই সময়ের অসংখ্য রূপক শব্দ ও কাব্যরস ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা আজও জানিনা আসলে এই কাব্যরস গুলো দিয়ে তারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। যেমন এই বাহনগুলোর পাইলটকে কেমন দক্ষ হতে হবে, তাদের খাবার কী হবে, তাদের পোশাক কী রকম হবে, একবার খাবার নিয়ে তারা কতদিন চলতে পারবে ইত্যাদি। সমরঙ্গণ সূত্রধর তার গবেষণায় লিখেছেন, ‘শাস্ত্রে বাহনটি তৈরি করতে যে ডিজাইনের কথা বলা হয়েছে, সেখানে তিনটি পদার্থের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- সামালা, সাউন্ডালিকা ও মোউর্থিকা। যদি এই তিনটি পদার্থ একসঙ্গে ভালভাবে মেশানো হয়, তাহলে ১৬ প্রকার পদার্থ তৈরি হবে। যেগুলোর নাম ঠিক এই রকম- উসনামভারা, উসনাপা, লাজামরাতিক ইত্যাদি। কিন্তু সেগুলোর অর্থ আমাদের কাছে অজানা। এ ছাড়া বাহনটি তৈরি করতে কীভাবে ধাতুগুলো পরিস্কার করা হবে, কীভাবে বিভিন্ন এসিডিক পদার্থকে রিফাইন করবে, কীভাবে তাপমাত্রা থেকে তার তৈল সংগ্রহ করবে ইত্যাদিও বর্ণনা করা আছে।’ বাহনগুলোতে সাত ধরনের ইঞ্জিনের কথা বলা হয়েছে। যেগুলোর একটা আরেকটা থেকে আলাদা এবং তাদের কাজও আলাদা। একটিকে এক রকম কাজ করতে দেওয়া হয়, আরেকটিকে আরেক রকম কাজে লাগানো হয়। কারণ বিভিন্ন রকম ইঞ্জিন বিভিন্ন রকম কাজে পারদর্শী। তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ভাস্কর

No comments:
Post a Comment